ektu out of topic gelam, please don't read if you are busy
আনিসুল হক এর Facebook স্ট্যাটাস থেকে -
আমি অনন্ত জলিল ও বর্ষার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। শুনেছি, তাঁরা পিজাহাটে গিয়েছিলেন। তাদেরকে ‘পম গানা' জাতীয় সংলাপ শুনতে হয়েছে। বর্ষা রেগে গিয়ে প্লেট ছুড়ে মেরেছেন। তারপর অনন্ত ‘স্যরি' বলে না খেয়েই উঠে চলে গেছেন বর্ষাকে নিয়ে। আর উত্যক্তকারীরা তাকে গালিগালাজ করতে করতে ধাওয়া করেছেন। এটা আমি ফেইসবুকের বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমি নিজে দেখিনি। কাজেই ঘটনা একটু এদিক ওদিক হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন আমি অনন্ত ও বর্ষার কাছে ক্ষমা চাইছি। কেউ কোনো রেস্টুরেন্টে বউ নিয়ে গেলো, আর আমি তাকে টিজ করলাম, এটা কোনো ভদ্রতার মধ্যেই পড়ে না।
এই অভদ্রতার দায়িত্ব অবশ্য আমার না নিলেও চলত। পাবলিক ফিগার হলে নানা ধরনের ঝক্কি পোহাতে হয়। এবং গণমাধ্যম তাদের পেছনে লাগতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি, ডায়ানাকে পাপারাজ্জিরাই খুন করেছে।
আমি অনন্তর কোনো ছবিই দেখিনি। কিন্তু আমার দুর্ভাবনার বিষয়টা হলো, আমরা গণমাধ্যমেও তার সঙ্গে সেই রকম আচরণ করছি, যেমনটা একজন ইভ টিজার বা অ্যাডাম টিজার করে। আমাদের পত্রিকায় যখন অনন্তর সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা হলো ফান ম্যাগাজিনে, আমি বার বার করে বিভাগীয় সম্পাদক তথা সাক্ষাৎকারগ্রহীতাকে বলে দিয়েছি, ওকে আঘাত দিয়ে কোনো কথা বলবে না। যেন আমরা আমাদের অতিথিকে অপমান না করি।
অনন্তর উচ্চারণ ভালো না, যতটা দেখলাম। তবে ইংরেজিভাষীরা ‘ঘানা' বলতে পারে না, ‘গানা'ই বলবে, যেমন ওরা ঢাকাকে ‘ডাকা'ই বলবে, আপনি যতই বানান বদলান না কেন। ওরা গোস্ট বলে, ঘোস্ট নয়। এর বাইরেও অনন্তর উচ্চারণে এবং বাক্য গঠনে সমস্যা আছে। কিন্তু আমাদের অনেকেরই কি উচ্চারণ খারাপ নয়? আমার নিজের উচ্চারণ খুবই ত্রুটিযুক্ত। আমার সবচেয়ে প্রিয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের উচ্চারণে খুবই সমস্যা ছিল। এই রকম এক হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যাবে।
অনন্তর কাজ খারাপ হলে তাকে নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না, তা বলছি না। চলচ্চিত্র এমন একটা বিষয় যেটা নিয়ে দর্শকেরা কথা বলবেনই। কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অপমান করার চেষ্টা করা কি ঠিক?
মানুষকে অপমান করে আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা কি না করলেই নয়? আমরা যেন যে যা করছে, তার ভালোত্বটুকুনকে সম্মান করতে, এপ্রিশিয়েট করতে শিখি। অনন্ত নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছেন, যাতে তিনি সবার মনোযোগের কেন্দ্রে আসতে পেরেছেন। আর তার ছবির ক্লিপিংস যতটুকু সাক্ষাৎকারের ফাঁকে দেখেছি, তাতে মনে হচ্ছে, তাঁর ছবিগুলোতে যতেœর ছাপ আছে।
আমি বলি কী, আমরা যেমন, আমাদের নায়কও তেমনি হবেন। কাউকে যখন আমরা আঙুল তুলে কথা বলি, মনে রাখি যেন, একটা আঙুল, তর্জনী, তার দিকে উত্থিত হয়, ৩ টা আঙুল নিজের দিকেই তাক করা হয়ে থাকে।
মানুষকে আনন্দ দেওয়া মহত্তম কাজ। একটা মানুষ আমাদেরকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, আমরা তার ভালো দিকটাকে দেখব না?
একটা উদাহরণ কি দেব? আপনারা তো বলবেন, এই লোকের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, কিসের সঙ্গে কী মেলাচ্ছে? তবু বলি। রবীন্দ্রনাথের প্রকাশিত রচনা থেকে কলকাতার বোর্ডের পরীক্ষায় একটা অনুচ্ছেদ হুবহু তুলে দিয়ে বলা হয়েছিল, এই অনুচ্ছেদের ভুলগুলো সংশোধন করো। একটা মানুষকে কতভাবে অপমান করা যায়, তার সবই রবীন্দ্রনাথকে সইতে হয়েছিল। আর অনন্ত তো কোন ছার। আমরা রবীন্দ্রনাথকেই আঘাতের পর আঘাত হেনে ক্ষত-বিক্ষত করেছি।
আমি শুধু বলি, মানুষকে অপমান না করলেই কি নয়! একটা লোকের বেড়ানোর আনন্দ, বাইরে স্ত্রীকে নিয়ে খেতে যাওয়ার আনন্দ মাটি করে দিয়ে কি আনন্দ পাওয়া যায়?
জীবনানন্দ দাশ অবশ্য অনেক আগেই দুঃখ করে বলেছিলেন, অপরের মুখ ম্লান করে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ নেই।
একজনের মুখে হাসি ফুটিয়েও কি আমরা আনন্দ পেতে পারি না?